Magic Lanthon

               

এবিএম সাইফুল ইসলাম

প্রকাশিত ২৬ জানুয়ারী ২০২৩ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

ড. নো থেকে স্কাইফল—২

ক্যাসিনো রয়্যাল এবং বন্ড-এর নারীবাদ

এবিএম সাইফুল ইসলাম

 

বাস্তব জীবনে মানবিক সম্পর্কগুলোর মধ্যে সব থেকে প্রাচীন ও জটিল হলো নারী-পুরুষের সম্পর্ক। প্রথম দিকে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করলেও পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক পর্যায়ে এর ভূমিকা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে তথ্য, সংযোগ, শিক্ষা ও বিনোদনের জন্য চলচ্চিত্রের মতো পরাক্রমশালী অদ্বিতীয় এই গণমাধ্যমটিতেও নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিনির্মাণে নারীর ব্যবহার বা অপব্যবহার যাই হোক না কেনো, সমাজে চলচ্চিত্র নন্দনের শৈল্পিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এ শিল্পের একেবারে প্রথম দিকেই। সমাজ পরিবর্তনে, আত্মসচেতনতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্রকে হাতিয়ার বানানোর নিরন্তর চেষ্টা রাশিয়ায় (স্ট্রাইক, ব্যাটলশিপ পটেমকিন, অক্টোবর, মাদার, আর্থচলচ্চিত্রগুলো দেখলেই অনুমান করা যায়) শুরু হলেও ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার তৈরি অনেক চলচ্চিত্র পরবর্তী সময়ে সমাজ-জীবনে, কালভেদে অভিঘাত সৃষ্টি করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্রের তাত্ত্বিক গবেষণায় নিমগ্ন চিন্তাবিদ গাস্তঁ রোবের্জ-এর মন্তব্য স্মর্তব্য। তার মতে, সমাজ-জীবনে চলচ্চিত্রক. ফ্যাশন চালু করে; খ. ধ্যানধারণায় সমর্থন জোগায়; গ. সেন্সরশিপের ছকে বাঁধা কিছু যৌন আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে তরুণদের পরিচয় ঘটায়; ঘ. ক্ষমতাসীন সরকার যাকে সুরুচি বলে মনে করে, তার বিস্তৃতি ঘটায়; ঙ. সাধারণভাবে দর্শকের রুচিবোধকে ব্যাধিগ্রস্ত করে তোলে। চলচ্চিত্রের সঙ্গে উল্লিখিত বিষয় যোগের কারণেই চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা সমাজ-সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা বহন করে।

আমেরিকা ও ইংল্যান্ড পরাক্রমশালী মিত্র এ দুটি দেশের যৌথ আয়োজনে সারাবিশ্বে আলোচিত সিরিজের মধ্যে জেমস বন্ড অন্যতম ব্যবসাসফল এবং আলোচিত-সমালোচিত চলচ্চিত্র। ১৯৬২২০১২ সাল; বন্ড-এর এই ৫০ বছরের ইতিহাসে বন্ড-নারীরা ইঙ্গ-মার্কিন সেক্স-সিম্বলের নিদর্শন হিসেবে বিকশিত হয়েছে। বন্ড-এর প্রলুব্ধকর, মোহনীয়, চিত্তাকর্ষক বা অপূর্ব সুন্দর, দুর্দান্ত, অশালীন ও বেহায়া নারীরা চলচ্চিত্র জগতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নারী; যারা একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ এবং সংশয়হীনভাবে যৌন-সঙ্গমে পারদর্শী। এই ৫০ বছরে বন্ড চরিত্রের ধরন যেখানে প্রায় অপরিবর্তনীয়, সেখানে বন্ড-নারীরা দশকের পর দশক ধরে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে সময়ের আবর্তে। এ আলোচনায় বন্ড সিরিজে সার্বিকভাবে নারী নির্মাণের প্রধান বিষয়গুলো আলোচনা করে ক্যাসিনো রয়্যাল-এ নারীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রকে নির্বাচন করার কারণ দুটি। প্রথমত, বন্ড কনসেপ্টের প্রথম ন্যারেটিভ ক্যাসিনো রয়্যাল-এ নারীর অবস্থান মূল্যায়ন (ইয়ান ফ্লেমিং ১৯৫২ সালে ক্যাসিনো রয়্যাল লেখার মাধ্যমে জেমস বন্ড কনসেপ্টের আত্মপ্রকাশ ঘটান); দ্বিতীয়ত, চলচ্চিত্রটির নির্মাণকাল (এই চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালে নির্মাণ হয় অর্থাৎ নারীবাদের তৃতীয় ধারার পরবর্তী সময়ে নারীর অবস্থান মূল্যায়ন করা)। ১৯৯০২০০০ সাল, এই সময় থেকে নারীরা নিজেদেরকে সক্ষম/দক্ষ, শক্তিশালী/বলীয়ান ও দৃঢ়প্রত্যয়ী হিসেবে দাবি করতে থাকে।

১.

বন্ড-এর নারীবাদ প্রসঙ্গে বলার আগে একটি বিষয় উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, নারীবাদ বলতে একটি মাত্র তত্ত্ব অথবা রাজনৈতিক চর্চাকে বোঝায় না। নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম-অধিকার নিরূপণ এবং প্রতিষ্ঠা করতে একটি সামগ্রিক কর্মচাঞ্চল্য ও ভাবাদর্শের নাম নারীবাদ; যা বিভিন্ন চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চাকে বোঝায়। অ্যানেট কুন-এর মতে, ...নারীবাদ হচ্ছে রাজনৈতিক চর্চার সমষ্টি, যার ভিত্তি হচ্ছে নারীদের সামাজিক/ঐতিহাসিক অবস্থার বিশ্লেষণ এবং সে বিশ্লেষণ অনুসারে হয় প্রধান উৎপাদন পদ্ধতি (যথা পুঁজিবাদ) দ্বারা এবং/অথবা পিতৃতন্ত্র ও পুরুষ শাসনের সামাজিক সম্পর্ক দ্বারা নারীরা অধস্তন, নির্যাতিত অথবা শোষিত। গত কয়েক দশকে পাশ্চাত্যে সাংস্কৃতিক নিরীক্ষণ (কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি, গণমাধ্যম নিরীক্ষণ যার অংশ) নামে একটি বিষয়ের উদ্ভব হয়েছে; সাংস্কৃতিক নিরীক্ষণের বিষয় হচ্ছে বর্তমান সংস্কৃতি ও সমাজ, সাংস্কৃতিক কর্ম, চর্চা ও প্রতিষ্ঠান এবং সমাজ ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে এর সম্পর্ক। আর নারীবাদ সাংস্কৃতিক নিরীক্ষণকে প্রচ-ভাবে প্রভাবান্বিত করে। বন্ড সিরিজের নারী নির্মাণ নিয়ে এই আলোচনায় নারীবাদ বলতে আমি নারীবাদী চিন্তা ও চর্চাদুটোই আলোচনার চেষ্টা করেছি।

২.

প্রথমেই প্রাসঙ্গিক একটি উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। বাংলাভাষী পাঠকের কাছে শরৎচন্দ্র একটি সুপরিচিত নাম। তার রচিত সাহিত্য বাংলা ভাষাভাষী সর্বস্তরের পাঠকদের মধ্যে যতো ব্যাপকভাবে আজ পর্যন্ত পঠিত ও সমাদৃত, তার তুলনা বাংলা সাহিত্যে নেই। এ কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার এজন্য যে, শরৎচন্দ্রের সাহিত্য যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, সেটি যেকোনো উচ্চমান সম্পন্ন সাহিত্যের পথে সত্যিই বিরল। বিশেষ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও শরৎচন্দ্র নিষ্ঠার সঙ্গে মাতৃভাষা ও সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করে অল্প দিনের মধ্যেই বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেন। শরৎচন্দ্রের ভাষার প্রসাদগুণও সুনিবিদিত। তিনি তার অতুলনীয় কাব্যধর্মী গদ্যে বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে গল্প, উপন্যাস রচনা করলেও তার রচনার কেন্দ্রে ছিলো নারীর সমস্যা।

এই সমস্যা নিয়ে তিনি যেমন গল্প-উপন্যাস লিখেছেন, তেমনি রচনা করেছেন প্রবন্ধ। পল্লী সমাজ, গৃহদাহ, চরিত্রহীন, শ্রীকান্ত, শেষ প্রশ্নসহ অন্য অনেক গল্প-উপন্যাসে শরৎচন্দ্র নারীর সমস্যার বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। ধর্মের নামে, সমাজ রক্ষার নামে নারীর ওপর যে নির্যাতন জারি থাকে, সে বিষয়ে তত্ত্বগত আলোচনা তিনি করেন নারীর মূল্য নামে তার বিখ্যাত ও দীর্ঘ প্রবন্ধে। নারী নিয়ে ইতিবাচক এ রকম কাজ প্রায় সব সংস্কৃতিতেই কমবেশি বিদ্যমান। কিন্তু এ রকম ইতিবাচক ভাবনার একেবারে বাইরে এসে সমসাময়িক ইঙ্গ-মার্কিন আধিপত্যশীল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীকে নির্মাণের প্রয়াস লক্ষ করা যায় ইয়ান ফ্লেমিং-এর জেমস বন্ড নিয়ে রচিত উপন্যাসগুলোতে, যা সত্যিই আলাদা করে ভাবায় এবং আলোচনার দাবি রাখে। ফ্লেমিং তার বন্ড সিরিজের উপন্যাসে নারীকে যেভাবে উপস্থান করেছেন, তার উপন্যাস নিয়ে নির্মিত বন্ড সিরিজে নারীকে তার চেয়েও নেতিবাচকভাবে চিত্রায়ণ করা হয়েছে।

৩.

২০০৬ সালে মার্টিন ক্যাম্পবেল পরিচালিত ইয়ন প্রোডাকশনের ২১তম চলচ্চিত্র ক্যাসিনো রয়্যাল। এতে ড্যানিয়েল ক্রেইগ কাল্পনিক এম আই সিক্স এজেন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে বন্ড-এর উৎপত্তি বর্ণনা করা হয়। ক্যাসিনো রয়্যাল-এ সহিংসতামূলক কাজকর্মের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত ০০ কোডধারী একজন শান্ত ও নির্মম শিক্ষানবিশ সিক্রেট এজেন্টের যাত্রা এবং তার কিছু ভুলের বর্ণনা করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের শুরুতেই প্রি-ক্রেডিট সিকোয়েন্সে বন্ড-এর হাতে দুজন খুন হওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়—‘০০ খেতাবপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য যা অপরিহার্য ছিলো; অর্থাৎ একেকটি খুনের বদলে বন্ড একেকটি অর্জন করে। এরপর রহস্যময় মি. হোয়াইট সন্ত্রাসবাদীদের ব্যাংকার হিসেবে পরিচিত লি শিফরেকে আফ্রিকান সন্ত্রাসী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়; হোয়াইট-এর দৃঢ়প্রত্যয়ী যুক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে শিফরের সংগঠনে। আর বন্ড ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের যোগানদাতাদের খোঁজার চেষ্টা করে এবং একজন বোমা প্রস্তুতকারকের সন্ধান পায়; অতঃপর তাকে ধরতে গিয়ে জনসাধারণের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিসাধন করে, এমনকি একটি দূতাবাস পর্যন্ত উড়িয়ে দেয়। বন্ড-এর রিপোর্টিং পার্সন এম কঠোরভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বন্ডকে ভর্ৎসনা করে এবং সঙ্গোপনে থাকার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বন্ড বোমা প্রস্তুতকারকের মুঠোফোন বার্তার সূত্র ধরে তার অভিযান অব্যাহত রাখে এবং সন্ত্রাসী ডিমিট্রিয়াস-এর স্ত্রীকে প্ররোচিত করে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালায়; একপর্যায়ে তার স্বামীকে হত্যা করে এবং বিশাল একটি বিমানকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

শিফরে ক্লায়েন্টের টাকা বিনিয়োগ করে সেই বিমানের শেয়ার কিনে এই পরিকল্পনা করে যে, বিমানটি বোমা মেরে ধ্বংস করলে সে লাভবান হবে, কিন্তু বন্ড তা হতে দেয় না। তাই শিফরে লোকসান হওয়া টাকা ফেরত পেতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরবর্তী পরিকল্পনা হিসেবে শিফরে পোকার গেমের মাধ্যমে তার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে। এম আই সিক্স থেকে এ কাজে পারদর্শী বন্ডকে এই গেমে বিট করতে পাঠানো হয়। পরিকল্পনাটি ছিলো এ রকমবন্ড যেহেতু এ কাজে পারদর্শী, তাই সে যদি কোনোভাবে শিফরেকে সর্বশান্ত করতে পারে, তাহলে তার কাছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে ভেসপার লিন্ড একজন ট্রেজারি এজেন্ট। বন্ড-এর পোকার খেলার টাকার ব্যবস্থা করতে অথোরাইজড পাওয়ারের অধিকারী সে। কিন্তু শুরু থেকেই বন্ড ও লিন্ড-এর সম্পর্ক রহস্যময়, উত্তেজনাপূর্ণ ও যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়। পোকার চলাকালীন বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেকেই বন্ড ও লিন্ডকে জীবননাশের হুমকি দেয়। বিশেষ এই তাসের খেলায় প্রথম দিকে বন্ড হারলেও শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় এবং শিফরেকে সর্বশান্ত করে। শিফরে পরবর্তী সময়ে বন্ড ও লিন্ডকে বন্দি করে নির্যাতন চালিয়ে হারানো টাকা ফেরত চায়। কিন্তু বন্ড কোনোভাবেই টাকা ফেরত দিতে রাজি হয় না। শিফরে একপর্যায়ে বন্ডকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে গুলি করতে উদ্যত হলে বিভ্রান্তিকর হোয়াইট-এর আবির্ভাব হয় এবং ক্লায়েন্টের টাকা নিয়ে বিশ্বাসভঙ্গের কারণে শিফরেকে হত্যা করে।

কাহিনির এই পর্যায়ে জেমস ও লিন্ড তাদের চরিত্রের কঠিন বাস্তবতায় উপনীত হয়। তারা একে অন্যের প্রেমে গভীরভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে; অনুরাগসিক্ত কিছু সময়ও অতিবাহিত করে এবং একসঙ্গে থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। বন্ড তার পদত্যাগপত্র এমকে মেইল করে। লিন্ড ঠিক এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বন্ডকে না জানিয়ে পোকার-এ কামানো টাকা হোয়াইট-এর সংগঠনকে দিতে চায়। তবে বন্ড অনুসরণ করে লিন্ডকে এবং লিন্ড-এর কাছে টাকা নিতে আসা লোকটিকে মেরে ফেলে। শেষ পর্যন্ত বন্ড-এর সঙ্গে লিন্ড বিশ্বাসঘাতকতা করে অনুতপ্ত হয়ে আত্মহত্যা করে। লিন্ড-এর মৃত্যু ও তার বিশ্বাসঘাতকতায় বন্ড অনেকটা ভাবলেশহীন থাকে।

বন্ডকে ফোনে এম জানিয়ে দেয়, লিন্ড-এর বয়ফ্রেন্ড একজন ফ্রেঞ্চ-আলজেরিয়ান; শিফরের সংগঠন থেকে তাকে অপহরণ করে লিন্ডকে ব্ল্যাকমেইল করা হয় এবং তাকে বাধ্য করা হয় শিফরেকে সহযোগিতা করতে। বন্ড এরপর লিন্ড-এর মুঠোফোন বার্তার ইনবক্সে হোয়াইট-এর মুঠোফোন নম্বর পায়। শেষ দৃশ্যে বন্ড হোয়াইটকে ফোন করে বলে, মি. হোয়াইট উই নিড টু টক, প্রতি উত্তরে হোয়াইট যখন বলে, হু ইজ দিস? তখনই তার পায়ে বন্ড গুলি করলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এরপর বন্দুক উঁচিয়ে বন্ড বলে, দ্য নেমস বন্ড, জেমস বন্ড (sic)। এখানেই শেষ হয় ক্যাসিনো রয়্যাল

৪.

জেমস বন্ড সিরিজে নারীর প্রতিফলন ও চিত্রায়ণকে অনুসন্ধান করলে নারীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক রেপ্রিজেন্টেশন সহজেই অনুমান করা যায়। বন্ড-নারীরা গুরুত্বপূর্ণভাবে বন্ড চরিত্রের সঙ্গে গ্রথিত। ক্যাসিনো রয়্যাল (২০০৬) একটি ন্যারেটিভ এবং ভাবাদর্শিক গতিপথ প্রদর্শন করে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, চলচ্চিত্রটি যে সময়ে নির্মিত, সেই দশকে নারীর যে উপস্থাপন তা ইঙ্গ-মার্কিন সংস্কৃতির একেবারেই সম্যক প্রতিফলন বলা যায়। এ দশকে নারীরা অনেকখানি স্বাধীনতা এবং সমযোগ্যতা উপভোগ করেছে, কিন্তু তাদেরকে এখন পর্যন্ত পুরুষদের সমপরিমাণ জায়গায় স্থান দেওয়া হয়নি। এখনো তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে জীবনযাপন করছে, যেখানে তারা প্রায়ই চাকরি, পারিশ্রমিক, পুরস্কার এবং সাংস্কৃতিক মর্মভেদে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। ২০ শতকের শেষের দিকে নারীরা স্বাধীনতা ভোগের যে দাবি করে, তা গুটিকয়েক ক্ষেত্র ছাড়া আগের অবস্থানেই সীমাবদ্ধ। সুতরাং নারীবাদের তৃতীয় ধারায় দাবি করা নারী অধিকার এখনো বিভ্রান্তিকর বলা যায়। এ সময়ে তাদের মানসিকতা ও মূল্যবোধ উপলব্ধি করলে বোঝা যায়, তাদের বিকাশ কতোটুকু হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে Bailey (১৯৯৭) বলেন, তৃতীয় ধারার অর্থপূর্ণ আলোচনা নির্ভর করে দ্বিতীয় ধারায় নারীর আইনগত ক্ষমতার উপলব্ধি থেকে, আর দ্বিতীয় ধারার ধারণা স্পষ্ট করে প্রথম ধারায় তাদের সীমাবদ্ধতাগুলোকে। অর্থাৎ নারীবাদের বর্তমান ধারাকে বুঝতে হলে আগের দুটি ধারায় নারী অধিকার আন্দোলনেরঅবস্থানজানাজরুরি।তাহলেপরিষ্কারহবেআদৌনারীরঅবস্থানকতোটাপরিবর্তনহয়েছে।Macey-এর (২০০১) মতে, নারীবাদেরঅনেকভিন্নতরধরনথাকতেপারে, কিন্তুএরমূলপ্রতিপাদ্যনারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ও নিপীড়নের সম্পর্ক। আর নারীবাদের যে ধারণাই গ্রহণ বা বর্জন করা হোক না কেনো, তা আসলে নির্ধারিত হয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবেশের দ্বারা। KrolokkeSorenson (২০০৬) নারীবাদের তিনটি ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে বলেন এভাবে, নারীবাদের প্রথম ধারাটি উদ্ভব হয় শিল্পের প্রসার ও উদার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে; কিন্তু এটি উদারনীতিবাদ এবং ১৯ শতকের শেষ থেকে ২০ শতকের আগের আমেরিকা ও ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ উভয়ের সঙ্গেই সংযুক্ত। নারীবাদের দ্বিতীয় ধারাটির উত্থান ঘটে ১৯৬০-১৯৭০-এর মধ্যে, যখন অন্যান্য নিপীড়িত গোষ্ঠী যেমন : ব্লাক ও সমকামিদেরকে নির্দিষ্টকরণ করা হয়। তৃতীয় ধারাটি হচ্ছে ১৯৯০-এর মাঝামাঝি থেকে পরবর্তী সময়ে, যার প্রেক্ষাপট হচ্ছে ইনফরমেশন সোসাইটি, নিও-লিবারেল, গ্লোবাল পলিটিক্স ইত্যাদি। ‘‘কর্পোরেট উইমেন শিরোনামে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ‘glass ceilings’ (sic) নামে একটি টার্ম ব্যবহার করা হয়; এর মাধ্যমে বর্ণনার চেষ্টা করা হয়, উচ্চ পর্যায়ে নারীদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অদেখা কৃত্রিম বাধা/সঙ্কটগুলোকে। এই বাধা/সঙ্কটগুলো ব্যক্তি বা সংগঠনের পছন্দ-অপছন্দ দ্বারা সৃষ্ট।১০ বন্ড সিরিজে, নির্দিষ্ট করে ক্যাসিনো রয়্যাল-এ (২০০৬) ‘glass ceilings’-এর (sic) মতোই নারীকে রেপ্রিজেন্ট করা হয়। আর বন্ড সিরিজের চরিত্র, কাহিনি ও অ্যাকশন বাস্তব জগতের সবদিক থেকেই আলাদা। আমেরিকায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের প্রতি ৭৬ ডলারের বিপরীতে নারীদের আয় মাত্র এক ডলার। এছাড়া পাঁচশোটি কোম্পানির ওপর পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, এদের মধ্যে নারী সিইও মাত্র দুই জন এবং কর্পোরেট অফিসারদের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ মাত্র দশ শতাংশ।১১ অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে বলা যায়, তাদের সমাজে নারীরা মৌখিকভাবে যতোটা স্বাধীনতা বা অধিকার দাবি করে কাগজে-কলমে তা অবাস্তব। বন্ড সিরিজে ইঙ্গ-মার্কিন সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে, শুধু আমেরিকার নয়। তাদের নারীরা শারীরিক সৌন্দর্য ও সেক্সুয়াল সম্মোহন বৃদ্ধিতে নজিরবিহীন স্বাধীনতা উপভোগ করে, যা তাদের ব্যক্তিগত আনন্দ ও আংশিক ক্ষমতা প্রদানে সাহায্য করে।

ক্যাসিনো রয়্যাল ও অন্যান্য বন্ড চলচ্চিত্রে বন্ড-নারী সম্পর্কে প্রথম ইম্প্রেশন হবেতারা স্বতন্ত্র ও স্বাধীন এবং তারা মূল খলনায়ক বা পার্টনারের মতোই সমকক্ষ। সমযোগ্যতা (equal) শব্দটি বন্ড-নারীদের বর্ণনা করতে প্রায় নিয়মিতভাবেই ব্যবহার করা হয়।১২ বন্ড-নারীদের নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বন্ড গার্লস আর ফরেভার-এ এই ধারণার প্রমাণ পাওয়া যায়।১৩ প্রামাণ্যচিত্রটি ধারাবাহিক কিছু সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এখানে, বন্ড-নারীরা প্রায় ০০৭-এর সমান গুরুত্বপূর্ণএটি উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। আসলে বন্ড-নারীদেরকে রুপালি পর্দায় পুরুষতান্ত্রিক ভাবাদর্শের জায়গা থেকে দেখানো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের চিত্রায়ণ রোমান্টিক সংশ্লিষ্টতাপূর্ণ, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, বন্ড-এর সঙ্গে তাদের সেক্সুয়াল সম্পর্ক তৈরি হয়, কোনো অর্থপূর্ণ সম্পর্ক নয়। ক্যাসিনো রয়্যাল-এ ডিমিট্রিয়াস-এর স্ত্রী অথবা নায়িকা লিন্ড এর বাইরে নয়।

২০০৬ সালে ক্যাসিনো রয়্যাল নির্মাণ হলেও এর মূল উপন্যাস ইয়ান ফ্লেমিং লেখেন ১৯৫৩ সালে। এর কিছুকাল পরে ১৯৬০ সালের প্রথম দিকে ইতালির বিখ্যাত সেমিওটিশিয়ান, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ঔপন্যাসিক Umberto Eco ফ্লেমিং-এর উপন্যাস নিয়ে তার প্রবন্ধ Narrative Structures in Fleming’-এ বলেন, ফ্লেমিং-এর এই বন্ড-নারী সম্পর্কে সাধারণ সংকল্পনা হলোনারীটি সুন্দর ও ভালো, সে কামশীতল কিন্তু তার কৈশোরের কাজের জন্য সে অসুখী। এ কারণেই সে তার স্বভাব বহির্ভূতভাবে কাহিনিতে খলনায়কের পক্ষে কাজ করে, যদিও বন্ড-এর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সে বন্ড-এর মানবীয় ইতিবাচক বিষয়গুলোকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে; বন্ড তার মন জয় করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে হারিয়ে ফেলে।১৪ ইকোর বিশ্লেষণ ফ্লেমিং-এর উপন্যাস নিয়ে হলেও তা চলচ্চিত্র বিশ্লেষণে যথার্থ প্রয়োগযোগ্য। কেবল ইকো-ই বন্ড কাহিনির পুরুষতান্ত্রিক ন্যারেটিভ স্ট্রাকচারের কথা বলেননি, পরবর্তী সময়েBennettWoolacot (২০০৯) বন্ড কাহিনি বর্ণনা করতে ‘violent phallic solutions’ টার্মটি ব্যবহার করেন।১৫ যার মাধ্যমে সম-উত্তেজিত পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতার কথা বর্ণনা করেছেন।

প্রচলিত ন্যারেটিভের মতোই জেমস বন্ড চরিত্র নারীদেরকে সেক্সুয়ালি আকৃষ্ট করে। অন্যদিকে খলনায়কদের প্রচণ্ড সহিংসতার সঙ্গে হত্যা করেএমনকি কোনো নারী যদি শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে যৌনকাজে প্রবৃত্ত না হয়, সেও অনেক ক্ষেত্রে তার হাত থেকে রেহাই পায় না। বন্ড সাধারণত নারীদের প্রতি দুর্বল থাকে এবং তাদের প্রতি সহিংস আচরণ করে না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এটি বলা যায়, বন্ড সেই নারীদেরকে হত্যা করে বা সহিংস আচরণ করে, যাদের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয় না।১৬ অর্থাৎ বাঁচতে হলে বন্ড-এর সঙ্গে সেক্স করতে হবে। Hilary Neroni (২০০৫) বন্ড-এর নারী চরিত্র নিয়ে একই কথা বলেন—‘বন্ড বৈশিষ্ট্যগতভাবেই নারীদের সঙ্গে বিছানায় যায়, তবে প্রণয় কামনায় ব্যর্থ হলে তাদেরকে হত্যা করে।১৭ তবে বন্ড সিরিজে বন্ডকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে নারীরাই বেশিরভাগ সময় বন্ড-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়।

ড্যানিয়েল ক্রেইগ-এর প্রথম চলচ্চিত্র ক্যাসিনো রয়্যাল সম্পর্কে Garland (২০০৯) বলেন, আগের বন্ড ফর্মুলা পরিবর্তনের ফলে জেমস বন্ড ন্যারেটিভের সাফল্যে নতুন মাত্রা পায়।১৮ যার প্রভাব আমরা দেখতে পাই নারী ফর্মুলার ক্ষেত্রেও। তবে নারী চরিত্রের মধ্যে এম-এর চরিত্রটিকে ব্যতিক্রম বলা যায়। তার চিত্রায়ণ অনেকটা মাতৃশাসিত সমাজব্যবস্থার আত্মরক্ষার অবস্থানে। এম এখানে তার সংগঠনের সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ। চলচ্চিত্রের প্রথম দিকে বন্ড ড্রাইডেনকে বলে, সিক্রেট তথ্য অন্যকে দিয়ে অর্থ উপার্জন করাটা এম পছন্দ করবে না (০০.০১.১৪)। অন্যদিকে, বোমা প্রস্তুতকারককে ধরতে গিয়ে দূতাবাস উড়িয়ে দিলে গণমাধ্যমে বন্ড-এর ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হয়। বন্ড এরপর এম-এর বাড়িতে তালা ভেঙে প্রবেশ করে তার ফাইল ও আসল নাম হ্যাক করে; পরক্ষণেই এম চলে আসে এবং তার বাড়িতে এভাবে না ঢোকার জন্য হালকাভাবে নিষেধ করে। কিন্তু বন্ড যখন তার আসল নাম সম্পর্কে বলতে যায়, তখন এম বলে, আর একটি শব্দ উচ্চারণ করলে, আমি তোমাকে মেরে ফেলবো। এম তারপর বন্ডকে বলে, তোমাকে এতো দ্রুত এ কাজে নিয়োগ দেওয়া ঠিক হয়নি। তখন বন্ড বলে, আমি বুঝতে পারছি ০০ স্ট্যাটাসের কেউ দীর্ঘ সময়ের জীবন অতিবাহিত করতে পারে না, সুতরাং তোমার এই আক্ষেপ বেশিদিন থাকবে না। এ কথা শোনার পরেই এম শান্ত হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।

এরপর কথা শেষে বন্ড চলে যাওয়ার পর এম কিছু সময় বন্ড-এর বসে থাকা চেয়ারে অপলক তাকিয়ে থাকে। (০০.২১.৪৯-০০.২৫.৩০) এই সময়টা পর্যবেক্ষণ করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হবেপ্রথমত, পেশাগত সম্পর্কের বাইরে তাদের মধ্যে একধরনের মাতৃ-সন্তানসুলভ সম্পর্ক বিরাজমান। দ্বিতীয়ত, বন্ড-এর স্বল্প আয়ুর কথা শুনে শান্ত হয়ে যাওয়া এবং বন্ড চলে যাওয়ার পর তার বসার চেয়ারে তাকিয়ে থাকা। তৃতীয়ত, তার বাসায় ঢুকতে নিষেধ করা। সব মিলে তাদের মধ্যে স্নেহ, একই সঙ্গে সংশয়বাদের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। বাহামায় ডিমিট্রিয়াস-এর স্ত্রীর মৃত্যুর পর এম ও বন্ড-এর মধ্যে যে কথোপকথন হয় তার সারমর্ম হলো, আগে সে এই কেস অনুসন্ধানে নিষেধ করলেও এম চায় বন্ড পুনরায় কাজটি শুরু করুক। এখানেও এম-এর মাতৃসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যেমন একজন মা জানেন, তার ছেলে অবাধ্য হলেও তার প্রকৃতি কেমন হতে পারে। একই আচরণ দেখা যায় শেষ দৃশ্যের আগের দৃশ্যে, লিন্ড-এর কাছে প্রতারিত হওয়ার পর বন্ড যখন অনেকটা ক্রুদ্ধ ও ভাবলেশহীনভাবে থাকে, তখন এম সান্ত্বনামূলকভাবে বন্ডকে বলে, সে প্রতারণা করলেও নিজের জীবন বলি দিয়েছে; আর সে এটি করতে বাধ্য হয়েছে শিফরের সংগঠন থেকে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য।

এম-এর এই পরস্পরবিরোধী চরিত্র তাকে কিছুটা ব্যতিক্রম হিসেবে উপস্থাপন করে। অন্য নারী চরিত্রের ক্ষেত্রে কিন্তু বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্রে এটি ঘটে না। ডিমিট্রিয়াস-এর স্ত্রীর কথা বলা যায়, এই ন্যারেটিভে তার দুটি বিষয়কে বর্ণনা করা যেতে পারে। প্রথমটি আই ক্যান্ডি১৯ বা Mulvey-এর (১৯৯০)২০ একটি অ্যাকাডেমিক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে, fetish object২১(sic); দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লিঙ্ক হিসেবে। সমুদ্র সৈকতে তার ঘোড়ার পিঠে চড়ার দৃশ্য (০০.৩০.১০-০০.৩০.৫৪) এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে যে সঙ্গীতই ব্যবহার করা হোক না কেনো, এটি তার বিকিনি ও মোহনীয় শরীরের উপস্থাপন ছাড়া কিছুই নয়। তবে এই বিকিনি শোর সময় সৈকতে স্নানরত বন্ড যেভাবে তার দিকে তাকায় তাতে একধরনের বিমোহিত২২ (?) আহ্বান লক্ষ করা যায়।

বন্ড যে উদ্দেশ্যেই তাকাক না কেনো, এতে হয়তো কাজ হয়েছিলো; তাই ডিমিট্রিয়াস যখন জুয়ায় গাড়িসহ সবকিছু হারিয়ে ফেলে এবং বন্ড ক্যাসিনোর বাইরে তার স্ত্রীকে নিজের হোটেলে মদ্যপানের আহ্বান করে, তখন সে রাজি হয়ে যায়। একসঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর সময় বন্ড তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে। এছাড়া ক্যাসিনোতে তার প্রথম প্রবেশকে ক্যামেরায় আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখানোর চেষ্টা ছিলো, শুধু শরীর প্রদর্শনের জন্য এটির হয়তো প্রয়োজন ছিলো না। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুতে পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থার আক্রোশের প্রতিফলন দেখা যায়। স্বামীকে না জানিয়ে স্বাধীনভাবে বন্ড-এর সংস্পর্শে আসার জন্য তাকে নির্যাতন করে ডুবিয়ে মারা হয়। অর্থাৎ বন্ড-নারীরা স্বাধীনভাবে, ইচ্ছে মতো কিছু করতে পারবে না; করলেই তার মৃত্যু অবধারিত। লিন্ড-এর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও একই ধারণা কার্যকর থেকেছে।

১৯৬২ সালে বন্ড সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্র ড. নো থেকে ২০১২ সালে সর্বশেষ স্কাইফল পর্যন্ত যেসব চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে, নির্দ্বিধায় এ কথা বলা যায়, সেগুলোর মধ্যে লিন্ডকে যতোটা সমান গুরুত্ব দিয়ে ক্যাসিনো রয়্যাল-এ উপস্থাপন করা হয়েছে, বন্ড-এর আর কোনো চলচ্চিত্রে কোনো নারীকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়নি। ট্রেনে লিন্ড ও বন্ড-এর পরিচয়পর্ব (০০.৫৮.০৭) থেকে শেষ দৃশ্যের আগের দৃশ্য (০২.১৮.৩৯) পর্যন্ত তার প্রমাণ বহুভাবে দেখানো সম্ভব। পরিচয় পর্বেই লিন্ড দৃঢ়তার সঙ্গে বন্ড-এর ব্যক্তিত্ব, অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন তির্যকভাবে কথা বলে যে, বন্ড একপর্যায়ে বলেই বসে, সে তার অনুভূতিকে আঘাত করে কথা বলছে। এ পর্যন্ত বন্ড-এর অন্য কোনো চলচ্চিত্রে কোনো নারীকে এমন সাহসীভাবে দেখা যায় না।

বন্ড ট্রেন থেকে নেমে ট্যাক্সিক্যাবেও লিন্ড-এর সঙ্গে কথায় যুত করতে না পেরে বলেই বসে, ইউ আর নট মাই টাইপ(০১.০৩.১৬)। এরপর ট্যাক্সি থেকে নেমে হোটেল স্প্লেনডিড-এ বন্ড আরেকবার লিন্ড-এর কাছে রিফিউজড হয়, যখন লিন্ড লিফ্টে উঠে (০১.০৪.২৪) বন্ডকে অন্য লিফ্টে আসতে বলে। ক্যাসিনো রয়্যাল-এ অবশ্যই লিন্ডকে গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে; কারণ ব্রিটিশ ট্রেজারি কাজ করে বন্ড-এর মিশন প্রোগ্রেস নিয়ন্ত্রণ নিয়েএ ধরনের স্বভাববিরুদ্ধ নারী চরিত্র বন্ড-এর কোনো সিরিজে পাওয়া যায় না। পোকার গেমে ট্রেজারি থেকে পাওয়া প্রথম কিস্তির ১০ মিলিয়ন ডলার হারার পর পরবর্তী পাঁচ মিলিয়নের জন্য বন্ড যখন লিন্ড-এর কাছে আবেদন করে, তখনো সে (লিন্ড) তা রিফিউজ করে। কারণ, বন্ড-এর অহংবোধ দেখে লিন্ড বুঝতে পারে বাকি অর্থও সে হেরে যাবে। এক্ষেত্রে লিন্ড-এর বিচক্ষণতার পরিচয় মিলে, একই সঙ্গে বন্ড-এর থেকে তাকে ক্ষমতাবান মনে হয়। কেননা, বন্ডকে না করার সাহস এখন পর্যন্ত অন্য কোনো বন্ড-নারীর হয়নি।

এ প্রসঙ্গে Tincknell (২০০৯) বলেন, ন্যারেটিভে লিন্ড-এর ভূমিকা প্রচলিত বন্ড-নারীদের থেকে একেবারেই আলাদা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিন্ডকে সামাজিকভাবে স্বাধীন পোস্ট-ফেমিনিস্ট চরিত্র হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ড-এর সঙ্গে উপহাসমূলক সম্পর্ক স্থাপন করে।২৩Tincknell -ও লিন্ডকে সামাজিকভাবে স্বাধীন পোস্ট-ফেমিনিস্ট চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ক্যাসিনো রয়্যাল-এ নারীর সমতা ও ক্ষমতায়ন দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে হয়তো, কিন্তু পক্ষান্তরে এখানে নারীকে প্রথমত, বন্ড এবং দ্বিতীয়ত, পুরুষ শাসিত সমাজের বশ্যতা স্বীকার করে নিতেও বলা হয়েছে। শিফরের আফ্রিকান সন্ত্রাসী ক্লায়েন্টরা যখন (০১.১৯.৪৯-০১.২৪.৪৬) গচ্ছিত টাকা ফেরত নিতে এসে শিফরেকে হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো, তখন বন্ড স্বভাবসুলভভাবে লুকিয়ে ঘটনা জানার চেষ্টা করে। এবং হুমকিদাতারা যখন হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়, তখন বন্ডকে দেখে ফেললে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড মারামারি হয় এবং আফ্রিকান সন্ত্রাসী দলের দুজনকে বন্ড শেষ পর্যন্ত মেরে ফেলে।

এ ঘটনায় লিন্ড-এর শরীরী অংশগ্রহণ দেখাতে গিয়ে পরোক্ষভাবে চরিত্রটিকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। কারণ মারামারির সময় লিন্ড প্রচণ্ড ভয় পায় এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতেই ব্যস্ত থাকে। একপর্যায়ে বন্ড ও এক সন্ত্রাসীর ধস্তাধস্তি শুরু হলে, সন্ত্রাসীটি পড়ে থাকা পিস্তল নেওয়ার চেষ্টা করলে লিন্ড দ্রুত এসে ধাক্কা দিয়ে পিস্তলটি ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং এ সময় হাত ফসকে ওই গুলিতে অন্য এক সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়; লিন্ড তখন ভয়ে কাঁদতে শুরু করে এবং পরে হোটেল কক্ষের শাওয়ারের নীচে চুপচাপ বসে থাকে। পোকার থেকে ফেরার পরও বন্ড দেখতে পায় লিন্ড শাওয়ারের নীচেই বসে আছে; বন্ডকে তখন সে বলে, মনে হচ্ছে এখনো তার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।

Tincknell (২০০৯) এ প্রসঙ্গে বলেন, এই দৃশ্যে লিন্ড একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া কিছুই নয়। নারীরা পুরুষের মতো কাজ করতে পারে, এটা দেখাতে গিয়ে এখানে নারীর অক্ষমতাটাকেই প্রকাশ করা হয়েছে। শারীরিক সহিংসতার এ দৃশ্যে তাকে জড়িত করে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছেনারী নয়, সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে পুরুষই বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন এবং প্রয়োজনীয়।২৪ লিন্ড-এর বিচক্ষণতা, তার নিজস্ব স্বভাবসুলভ কঠোরতা এবং বন্ড-এর পোকার গেমের অর্থ নিয়ন্ত্রণকিছুই তাকে ০০৭-এর সমান পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারেনি। অন্যদিকে বন্ড ঠিকই দর্শক-শ্রোতার প্রত্যাশিত ফর্মুলা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত লিন্ডকে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে, তাদের মধ্যে রোমান্সও হয়। কিন্তু সে খলনায়কের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে বন্ড-এর সঙ্গে প্রতারণা করে।

এখানেUmberto Ecoর শেষ পয়েন্টটির কথা এসে যায়—‘বন্ড জয় করে লিন্ডকে এবং হারিয়ে ফেলে। লিন্ড-এর মৃত্যু শেষ পর্যন্ত ক্যাসিনো রয়্যাল-এ পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজব্যবস্থাকেই প্রমাণ করে। বন্ড-এর পুরুষকেন্দ্রিক মনোভাব বিভিন্নভাবে এতে প্রদর্শন হয়েছে; কিন্তু নারীদের সফলতা এখনো সীমাবদ্ধ। নারীবাদের তৃতীয় ধারা পরবর্তী সময়ের বন্ড-চলচ্চিত্র ক্যাসিনো রয়্যাল সেই সময়ের নারীর সামাজিক-সাংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বাস্তবে বা স্ক্রিনে তাদেরকে যতোই স্বাধীন, দক্ষ বা ক্ষমতাবান হিসেবে দাবি করা হোক না কেনো আসলে তাদের অবস্থা এখনো glass ceilings-এর (sic) মতো।

৫.

বন্ড সিরিজ সামগ্রিকভাবে সেক্স-ভায়োলেন্সের সংমিশ্রণ, যেখানে বেশিরভাগ নারীই বলাৎকারকে উপভোগ করে। আর বন্ড তার পেশার কল্যাণেই নারীদের সঙ্গে বিছানায় যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রযোজক, পরিচালকরা মূল গল্প থেকে সাধারণত একজন নারীকে নির্বাচন করে এবং চলচ্চিত্রের ধরন অনুযায়ী তারা বন্ড-এর বিপরীতে অতিরিক্ত দুই থেকে তিনজন নারীকে ব্যবহার করে; এবং বন্ড-নারীরা আস্তে আস্তে নারীতে রূপান্তর হয় তাদের অশালীন কাজকর্ম ও যৌনতাসম্পন্ন নামের কারণে, যেমন : পুসি গ্যালর, হলি গুডহেড, জেনি ফ্লেক্স, প্লেনটি ওটুলি, বিবি ড্যাল, অক্টোপুসি ইত্যাদি। ফ্লেমিং সেক্সুয়ালি ইঙ্গিতপূর্ণ এ নামগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করতেন পুরুষদের সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য।

উপন্যাস থেকে স্ক্রিনে কখনো বা আরো আকর্ষণীয় করার জন্য নাম সংক্ষিপ্ত করা হয়, যেমন : ড. নো-তে (১৯৬২) হানিচিলি রাইডার পরিবর্তন হয়ে যায় হানি রাইডার। আবার অনেক তর্ক-বিতর্ক করে শেষ পর্যন্ত গোল্ডফিঙ্গার-এ (১৯৬৪) অনার ব্লাকম্যান-এর নাম পুসি গ্যালর রাখা হয়। কারণ, সেই সময় নিউইয়র্কের একজন জনপ্রিয় যৌনকর্মীর নাম ছিলো পুসি গ্যালর।২৫ দর্শকের সুড়সুড়িকে আরো উস্কে দেওয়ার জন্য তাদের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্মাতারা কৌশলী হয়, যেমন : গোল্ডফিঙ্গার-এ (১৯৬৪) বন্ড যখন জিজ্ঞাসা করে, হু আর ইউ? অনার ব্লাকম্যান তখন বলে, আই অ্যাম পুসি গ্যালর; বন্ড তখন হাসিমাখা উত্তর করে, আই মাস্ট বি ড্রিমিং।২৬ (sic)

সারাবিশ্বের চলচ্চিত্র-দর্শকের কাছে বন্ড-নারীর পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ড. নোর মাধ্যমে, উর্সুলা অ্যান্ড্রেস যখন জ্যামাইকার সমুদ্র তীরে সাদা বিকিনি পরে হাঁটে। যে বিকিনি আজকের যুগে নারীদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সৌন্দর্য প্রকাশে জনপ্রিয়, অথচ ১৯৬০-এর দশকে তা ছিলো না। ১৯৪৬ সালে প্যারিস ফ্যাশন শোতে প্রথম বিকিনি পরিধান করা হয়েছিলো মাত্র, আর ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত এটি ছিলো একধরনের ট্যাবু।২৭ নারী ইতিহাসে হয়তো এটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ১৯৬০-এর দশকে মানুষ বন্ড-নারীর এ দৃশ্য দেখে একটু অভিঘাত পেয়েছিলো। টেড মুর-এর শুটিং স্ক্রিপ্টে দৃশ্যের বর্ণনা ছিলো এ রকমবাড়িতে তৈরি ফিতার বিকিনি পরা ছাড়া সে উলঙ্গ থাকবে।২৮ ড. নো মুক্তি পাওয়ার পর উর্সুলা অ্যান্ড্রেস-এর এই বিকিনি পরা দৃশ্য সারাবিশ্বে খবরের শিরোনাম হয়েছিলো। আর আজ! নারীদের সৌন্দর্য এবং যৌন-আবেদন প্রকাশ করার জন্য বিকিনি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ।

যাই হোক, বিকিনি পরা এ দৃশ্য খুবই সুসংহতভাবে উপস্থাপনে প্রয়োজনীয় চতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। কারণ, বিশ্বে তখন পর্যন্ত বিকিনির গ্রহণযোগ্যতা বা উপযোগিতা তৈরি হয়নি। খুব উদ্ধতভাবে প্রকাশ করলে দর্শক নিশ্চয়ই নিরাসক্ত হতো। তাই হানি রাইডারকে এখানে গ্রাম্য মেয়ে হিসেবে দেখানো হয়, যে জনপ্রিয় বা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব থেকে মুক্ত। সে স্বাভাবিক গোসলের পোশাকের মতোই এটি ব্যবহার করে। বিকিনির এই প্রভাব বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন প্লেবয়-এর ওপরও পড়ে। ড. নো মুক্তির পরে প্লেবয়-এর সংখ্যায় ফ্রন্ট পেজে তারা বিকিনি পরিহিত মডেলের ছবি প্রকাশ করে।২৯ আর উর্সুলার ঐতিহাসিক সেই বিকিনি পরবর্তী সময়ে নিলামে ৪১ হাজার একশো ২৫ ডলারে বিক্রি হয়।৩০

গোল্ডফিঙ্গার-এ (১৯৬৪) পুসি গ্যালরকে জোর করে চুমু খায় বন্ড। পরে অবশ্য এতে গ্যালর খুশিই হয়। এর মাধ্যমে একটি বার্তা প্রতীয়মান হয় যে, নারীরা জানে না তারা কী চায় বরং পুরুষরাই তাদেরকে শেখায়। ৬০-এর দশকে এ ধরনের দৃশ্য রোমান্টিক হলেও বর্তমানে এ ধরনের (জোরপূর্বক) দৃশ্য যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের শামিল।৩১ আবার অন হার ম্যাজিস্টিস সিক্রেট সার্ভিস-এ (১৯৬৯) বন্ড নায়িকার প্রেমে পড়ে এবং বিয়ে করে। ১৯৬২-২০১২ সাল পর্যন্ত এ সিরিজের মোট ২৩টি চলচ্চিত্রের মধ্যে এই একটিতেই কেবল বন্ড বিয়ে করে। বন্ড-এর এই ভিন্ন ফর্মুলা দর্শককে চমক দেওয়া, আকৃষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, বিয়ের কয়েক মুহূর্ত পরেই খলনায়কের গুলিতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ, আবার সেই সিঙ্গেল বন্ড।

ডায়মন্ডস আর ফরেভার-এর (১৯৭১) জন্য ওয়েলস ও জিল সেন্ট জনকে যথাক্রমে প্লেনটি ওটুলি ও টিফ্যানি কেস্-এর চরিত্রে চুক্তিবদ্ধ করেন প্রযোজক। শেষ পর্যন্ত ওয়েলসকে বাদ দিয়ে লানা উডকে কাস্ট করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, ওয়েলস এই চরিত্রের জন্য খুব কর্তৃত্বপরায়ণ হবে। অর্থাৎ কোনো বন্ড-নারী অন্য কারো প্রতি আচরণে কর্তৃত্ব দেখাতে পারবে না। দ্য লিভিং ডে লাইটস-এ (১৯৮৭) ক্যারোলিন ব্লিচকে নতুন মিস মানিপ্যানি চরিত্রে এবং গোল্ডেন আই-এ (১৯৯৫) সামান্তা বন্ডকে মানিপ্যানির চরিত্রে দেখা যায়যে বন্ডকে ভালোবাসে কিন্তু তাকে বশীভূত করতে পারে না। গোল্ডেন আই -এ জুডি ডিঞ্চকে এম আই সিক্স-এর ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দেখা যায়। জুডি প্রথম দিকে বন্ডকে পছন্দ না করলেও পরে তাকে স্নেহ করতে শুরু করে। অর্থাৎ প্রমাণ হয় বন্ড অস্পৃশ্য নয়।

টুমরো নেভার ডাই-এর (১৯৯৭) পরিচালক রজার স্পোটিসউডি সচেতনভাবেই বন্ড-নারীকে নারীতে রূপান্তর করতে চান। টেরি হ্যাচার-এর ক্যারিয়ার প্যারিস কার্ভার-এর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছিলো। প্যারিস ছিলো খলনায়কের স্ত্রী, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সে এখানে বন্ড-এর প্রাক্তন প্রেমিকা। সে বন্ডকে নিয়ে ভাবে এবং কাজে-কর্মেও তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ-এ (১৯৯৯) বন্ড-এর জীবনে নারীর বিস্তৃতি অনুপুঙ্খিকভাবে দেখানো হয়। এখানে ইলেক্ট্রা কিং মূল খলনায়ক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। বন্ড তাকে শেষ পর্যন্ত গুলি করে হত্যা করে, যা বন্ড রেসিপির নতুন কর্মক্ষেত্র। এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায় বন্ড-এর প্রেমে পড়ার অনীহার বিষয়টি; যদিও সে তাকে অনুভব করে কিন্তু তার সঙ্গে কোনো সম্পর্কে জড়ায় না। আর বন্ড তার প্রেমে পড়েনি বলেই কিংকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এ চলচ্চিত্রেই ডিনাইস রিচার্ডস কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচ ডি ডিগ্রিধারী একজন বিজ্ঞানীর চরিত্রে অভিনয় করে; যদিও উত্তরজীবী হতে সে বন্ড-এর ওপর নির্ভর করে।

ডাই অ্যানাদার ডেতে (২০০২) হ্যালি বেরির জিঙ্কস চরিত্রটি যখন কমলা রঙের বিকিনি পরে পানির মধ্য থেকে উঠে আসে, তখন ড. নো-এর উর্সুলা অ্যান্ড্রেস-এর স্মৃতিচারণ করতে হয়। বেরির চরিত্র শুধু বন্ড-এর প্রেমিকা হিসেবে নয়, তার চরিত্রের মাধ্যমে আমেরিকার সঙ্গে ব্রিটিশদের মিত্র সম্পর্ককে উপস্থাপন করে। এখানে বেরিকে সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে দেখা যায়। রোজামুন্ড পাইক-এর মিরান্ডা ফ্রস্ট চরিত্রটির সঙ্গেও বন্ড-এর শারীরিক লীলা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে খলনায়কের পক্ষে কাজ করে। বন্ড-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় অনাচার বা ব্যভিচার হচ্ছে সে অপ্রতিরোধ্য এবং নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে পটু।

কোয়ান্টাম অব সলিস-এ (২০০৮) প্রধান নারী চরিত্রে দেখা যায় ওলগা কারিলেনকোকে, যে এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং তাকে প্রায় বন্ড-এর প্রতিমূর্তি বলা যায়। ওলগার-এর এই ক্যামিলি চরিত্রটি স্বতন্ত্র, শক্তিশালী ও দক্ষ। যে তার বাবার হত্যা ও মা-বোনের ধর্ষণের প্রতিশোধ নিতে চায়। তার সঙ্গে অবশ্য বন্ড-এর শারীরিক কোনো সম্পর্ক দেখানো হয় না; কিন্তু ব্রিটিশ কনস্যুলেটের বলিভিয়ায় এম আই সিক্স-এর ফিল্ডকর্মী স্ট্রবেরি ফিল্ডস চরিত্রে অভিনয় করা আর্থারটনের সঙ্গে দেখানো হয় বন্ড-এর শারীরিক সম্পর্ক। অর্থাৎ বন্ড সিরিজের প্রতিটি চলচ্চিত্রেই নারীর শারীরিক সম্পর্ক দেখানোটা যেনো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। তবে কোয়ান্টাম অব সলিসক্যাসিনো রয়্যাল-এর কাহিনিতে নারী চরিত্র তুলনামূলকভাবে অন্যান্য চলচ্চিত্র থেকে শক্তিশালী।

বন্ড সাম্রাজ্যের সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র স্কাইফল (২০১২)। ক্যাসিনো রয়্যালকোয়ান্টাম অব সলিস দেখে যে কেউ আশা করতে পারে, বন্ড-নারী চরিত্রকে নারীবাদের তৃতীয় ধারার এই পরবর্তী সময়ে আস্তে আস্তে গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখানো হবে; কিন্তু স্কাইফল-এ তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। এখানে সব নারী চরিত্রকেই নেতিবাচকভাবে দেখানো হয়েছে। এম চরিত্রে অভিনয়কারী জুডি ডিঞ্চকে ফরেন ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়; কিন্তু সে নিজে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এ কারণে ইন্টেলিজেন্স ও সিকিউরিটির চেয়ারম্যান তাকে পদত্যাগ করতে বলে, এমনকি গণশুনানিতে যুক্তি প্রদর্শন করতে দেখা যায়। সে ব্যর্থ বলেই হয়তো শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুও দেখানো হয় এখানে। অর্থাৎ কোনো নারী তার যথেষ্ট সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার বেঁচে থাকার অধিকার নেইসেটি স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক যে মৃত্যুই দেখানো হোক।

আরেক বিশিষ্ট নারী হচ্ছে ইভ্ মানিপ্যানি চরিত্রের নওমি হ্যারিস। শুরুতেই একটি মিশনে সে বন্ড-এর পার্টনার থাকে। একপর্যায়ে বন্ড ও শত্রুপক্ষের একজন যখন ট্রেনের উপর প্রচণ্ড লড়াই শুরু করে, তখন মানিপ্যানি তাদের পিছনে গাড়ি চালিয়ে অনুসরণ করে এবং সদর দপ্তরে ঘটনার বর্ণনা সরাসরি পাঠাতে থাকে। একপর্যায়ে যখন পরিবেশ পরিস্থিতি খানিকটা বন্ড-এর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন বন্ডকে নিরাপদে রেখে এম ওই ব্যক্তিকে গুলি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু গুলিটি বন্ড-এর শরীরেই লাগে এবং সে ছিটকে সুড়ঙ্গের পানিতে পড়ে যায়। তখন মিশনে ব্যর্থতা ও বন্ডকে হত্যার (যদিও পরে দেখা যায়, সে বেঁচে আছে) জন্য দায়ী করা হয় এম ও মানিপ্যানিকে। চলচ্চিত্রের শেষ দিকে মানিপ্যানি ফিল্ড এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং গ্যালোরির সেক্রেটারি হিসেবে নতুন এম কাজ শুরু করে।

স্কাইফল-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নারী চরিত্র সেভারিন। যাকে খলনায়ক সিলভা নিয়োগ দেয়। বন্ড যখন ক্যাসিনোতে বিপুল অঙ্কের নগদ টাকা নিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করে, তখন সেভারিন নিজেই বন্ড-এর কাছে এসে মদ্যপানের প্রস্তাব দেয়। এরপর বন্ড ও সেভারিন একসঙ্গে মদ্যপানের সময় আলাপচারিতার একপর্যায়ে সিলভার প্রসঙ্গ আসে, তখন সেভারিন ভয় পেয়ে যায়; কিন্তু বন্ড তার কাছে প্রতিজ্ঞা করে, সে সাহায্য করলে সিলভাকে সে হত্যা করতে পারবে। সেভারিন রাজি হয় এবং তারা একসঙ্গে রাত্রি যাপন করে।

সিলভার লোকদের হাতে বন্দি হয়ে সেভারিন ও বন্ড যখন তার সেই দ্বীপে পৌঁছায়, সেখানে কথোপকথনের একপর্যায়ে বন্ডকে একটি গেম খেলতে সিলভা বাধ্য করে। ৫০ বছরের পুরনো ম্যাকালান মদ (১৯৬২ সালে তৈরি, ক্লোজ শটে দেখানো হয়) ছোটো দুটি গ্লাসে ঢেলে সিলভা একটি বন্ডকে দিয়ে অন্যটি সেভারিন-এর মাথার উপর রেখে নিশানা পরীক্ষা করতে বলে; বন্ড গুলি করলে তা সেভারিন-এর মাথার পিছনে বাম দিকের পাথরের খণ্ডে লাগে, কিন্তু সিলভার নিশানা সেভারিন-এর মাথা গুলিবিদ্ধ করে। এই দৃশ্যে ৫০ বছরের পুরনো মদ দিয়ে যেভাবে গেম খেলা হয়, ঠিক একইভাবে ১৯৬২-২০১২ সাল পর্যন্ত বন্ড সিরিজের বেশিরভাগ চলচ্চিত্রেই নারীকে মদের মতোই উপভোগ্য এবং নিশানা পরীক্ষার মতো পুরুষের খেলার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৬.

১৯৬২ থেকে ২০১২ সালমোট ৫০ বছর। দীর্ঘ এ সময়ে বন্ড সিরিজের মুক্তি পাওয়া ২৩টি চলচ্চিত্রেই ছোটো-বড়ো অনেক নারী চরিত্র আছে, যার সবগুলোকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ এই ক্ষুদ্র পরিসরে নেই। এই প্রবন্ধে নারীবাদের তৃতীয় ধারার পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্র ক্যাসিনো রয়্যালকে (২০০৬) নমুনা ধরে, এর আগে-পরে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোকে নারীবাদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। সব বন্ড-নারী গুরুত্ব সহকারে আলোচনার মতো নয়; তবে সব নারী চরিত্রই স্বতন্ত্র এবং প্রত্যভিজ্ঞেয় রূপে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

বন্ড-নারীরা বন্ড ন্যারেটিভে স্বতন্ত্রভাবে ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে বন্ড চরিত্রের ওপর। বন্ড সাম্রাজ্যের ৫০ বছরের ইতিহাসে নারী চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। ১৯৬২ সালে ড. নোতে সমুদ্রতীরে হানি রাইডার-এর সেই বিকিনি পরে হাঁটার দৃশ্যের মাধ্যমে বোঝানো শুরু হয় সেক্সুয়ালি স্বাধীন, আকর্ষণীয় নারীরাই বন্ড-এর সঙ্গে প্রেমবিলাসে নিমত্ত হয়; যদিও কেউ কেউ এদের মধ্যে খলনায়ক রূপেও দৃশ্যমান।

বন্ড-নারী যে রূপেই আবির্ভূত হোক না কেনো পর্দায় তাদের উপস্থিতির একটি ছাপ লক্ষ করা যায়। তবে ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ-এর (১৯৬৩) রোজা ক্লেব এবং কয়েকটি চলচ্চিত্রে বন্ড-এর রিপোর্টিং পার্সন এম চরিত্রে রূপদানকারী জুডি ডিঞ্চ এর আওতার বাইরে। Chapman (২০০৭) বন্ড সিরিজের সেক্সুয়াল ভাবাদর্শকে সাম্রাজ্যবাদ ও নব্য-ঔপনিবেশিকতাবাদের যৌথ সংমিশ্রণ বলে দাবি করেছেন।৩২ আসলে সমাজ-জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য নারীকে সাধারণত যে দুর্বল অবস্থানে রাখে, সেই দুর্বলতার ওপর দাঁড়িয়েই সব ধরনের বৈষম্য, নির্যাতন ও নিপীড়ন সম্ভব হয়। আর ফ্লেমিং তার প্রথম উপন্যাস হিসেবে ০০৭ সিরিজের ক্যাসিনো রয়্যাল-এ (১৯৫২) নারীকে তার অন্যান্য উপন্যাস থেকে মন্দের ভালো হিসেবে তুলনামূলকভাবে পুরুষের সমান করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। পক্ষান্তরে এও বোঝানো হয়েছে, নারীরা পুরুষের সমকক্ষ নয়; কিন্তু ০০৭ সিরিজের অন্যান্য উপন্যাসে নারীদেরকে তার থেকেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেগুলি নিয়ে পরে বন্ড সিরিজের অন্যান্য চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে।

আর ০০৭ বা বন্ড সিরিজের ক্ষেত্রে শুরুতেই ড. নোতে (১৯৬২) মেয়েদেরকে যেভাবে ভোগের সামগ্রী হিসেবে পুরুষের অধস্তন করে চিত্রায়ণ করা হয়েছে, তা ধারাবাহিকভাবেই চলতে থাকে। নারীবাদের তৃতীয় ধারা পরবর্তী সময়ে এসে ক্যাসিনো রয়্যালকোয়ান্টাম অব সলিস-এ নারীকে অপেক্ষাকৃতভাবে পুরুষের সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখানোর অপচেষ্টা হলেও তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তার পরও সেই ধারা অব্যাহত থাকেনি। স্কাইফল-এ এসে বন্ড-নারীরা আবার আগের বৈষম্যমূলক অবস্থানেই চলে যায়।

লেখক : এবিএম সাইফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ান।

mon_mcru@yahoo.com

 

তথ্যসূত্র

 ১. চৌধুরী, মাহমুদা (১৯৮৭ : ৪২); চলচ্চিত্র মাধ্যমে নারী; গণমাধ্যম ও নারী; নারী সংহতি, ঢাকা।

২. Krolokke, Charlotte and Anne Scott Sorensen (2006 : 15); Gender communication theories and analysiy: from silence to performance; Sage Publication Inc., USA.

৩.  আহমেদ, রেহনুমা (১৯৮৭ : ১); পাশ্চাত্য ও তৃতীয় বিশ্বের গণমাধ্যম নিরীক্ষণের পর্যালোচনা; গণমাধ্যম ও নারী; নারী সংহতি, ঢাকা।

৪. উমর, বদরুদ্দীন (২০০৩ : ৭০); নারীর মূল্য; নারী প্রশ্ন প্রসঙ্গে; সম্পাদনা : বদরুদ্দীন উমর; শ্রাবণ প্রকাশনী, ঢাকা।

৫.  পোকার হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির জন্য তাসের খেলা বিশেষ, এতে খেলোয়াড়রা তাদের হাতে থাকা তাসের মূল্যের ওপর বাজি ধরেন।

৬. Elmuti, D. & Lehan, J. & Harmon, B. & Xiaoyan, Lu (2003 : 1-20); Inequality Between Genders in the Executive Suite in Corporate America et al Equal Opportunities International, 22(8).

Goodman, J.S. & Fields, D.L. & Blum, T.C. (2003 : 475-502); Cracks in the Glass Ceiling: In What Kinds of Organizations do Women Make it to the Top?; Group & Organization Management, 28(4). 

৭. Bailey, C. (1997 : 18);  Making Waves and Drawing Lines : The Politics of Defining the Vicissitudes of Feminism; Hypatia (A journal of feminist philosophy), 12(3), Edit : J. Scholz Sally; department of philospohy, Villanova University, USA.

৮. Macey, D. (2001 : 122); Penguin Dictionary of Critical Theory; Penguin Books, London, New York, Ontario, new Delhi.

৯. প্রাগুক্ত; Krolokke, Charlotte and Sorensen Anne Scott (2006 : 1).

১০. Schaefer,  Richard T. (2008 : 548); Encyclopedia of race, ethnicity, and society; Edit : Richard T. Schaefer; SAGE Publications, Inc., USA.

১১. Bellafante, G. (1998 : 55); Feminism: It’s All About Me!; Time Magazine, 151(25).

১২. Tincknell, E. (2009 : 81-99); Double-0 Agencies: Femininity, Post-Feminism and the Female Spy; Revisioning 007 ; Edit : Christoph Lindner; Wallflower Press, London.

১৩. প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে চাইলে youtube-Bond Girls are Forever (John Watkin, 2002) documentary film লিখে সার্চ করুন।

১৪. Eco, Umberto. (2009 : 44-55); Narrative Structures in Bond; The James Bond Phenomenon; Edit : Christoph Lindner; Manchester University Press, Manchester.

১৫. Bennett, T. & J. Woollacott (2009 : 13-34); The Moments of Bond; The James Bond Phenomenon; Edit : Christoph Lindner; Manchester University Press, Manchester.

১৬. প্রাগুক্ত; Bennett and Woolacot (2009 : 13-34).

১৭. Neroni, Hilary (2005 : 128); The Violent Woman; Albany, State University of New York Press, USA.

১৮. Garland, T.W. (2009 : 181); The Coldest Weapon of All : The Bond Girl Villain in James Bond Films; The Journal of Popular Film and Television; 37(4), Taylor & Francis, UK.

১৯. a person who is or people considered highly attractive to look at, often implying that they are but lacking in intelligence or depth, (http://dictionary.reference.com/browse/Eye+Candy?s=t).

২০. Mulvey, L. (1990 : 35); Visual Pleasure and Narrative Cinema; Issues in Feminist Film Criticism; Erens, P., Indiana University Press, USA.

২১. A sexual interest in an object or a part of the body other than the sexual organs (http://dictionary.cambridge.org/search/british/direct/?q=fetish).

২২. বন্ড-এর চাহনি বিমোহিত ছিলো, কিন্তু এটিকে মনে হয় বিমোহিত বলা ঠিক হবে না, কারণ এটি ছিলো বন্ড-এর নারী পটানোর একধরনের অভিনয়সুলভ আচরণ। কারণ, অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে কৌশলে ডিমিট্রিয়াস-এর তথ্য সংগ্রহ করে বন্ড সৈকতে গিয়েছিলো; কারণ তথ্য মতে, সৈকতের ধারেই ডিমিট্রিয়াস-এর বাসা ছিলো। আর বন্ড-এর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটি একটি সহজাত প্রবৃত্তিনারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে তথ্য সংগ্রহ করা। তাই বন্ড-এর বিমোহিত চাহনিকে রহস্যময় বলা যায়।

২৩. প্রাগুক্ত; Tincknell (২০০৯ : ৯৯).

২৪. প্রাগুক্ত; Tincknell (২০০৯ : ১১০).

২৫. CORK, J. & B. SCIVALLY (2002 : 75); James Bond: the legacy; Boxtree, London.

২৬. BROCCOLI, A. R. & H. SALTZMAN, (1964) producers.. Goldfinger. Produced by Eon Productions, Ltd. and released by Danjaq, Inc. and United Artists Corporation. s.l. Danjaq, Inc. and MGM/UA Home Entertainment, Inc. [DVD]

২৭. http://en.wikipedia.org/wiki/Bikini

২৮. প্রাগুক্ত; Cork & Scivally (2002 : 43).

২৯. http://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_bikini

৩০. http://en.wikipedia.org/wiki/White_bikini_of_Ursula_Andress

৩১. CERALLI, M. & L. PFEIFFER, (1995). producers.. The Goldfinger phenomenon. Produced by TWINE Entertainment and released by MGM/UA Home Entertainment, Inc. s.l. MGM/UA Home Entertainment, Inc. [DVD]

৩২. Chapman, J (2007 : 24-29); License to thrill. A cultural history of the James Bond films;Tauris, London.

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন